ফলোআপঃমাকে পুড়িয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে রহস্যের উম্মোচন

0
726
ফলোআপঃমাকে পুড়িয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে রহস্যের উম্মোচন
ফলোআপঃমাকে পুড়িয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে রহস্যের উম্মোচন

নড়াইলের কালিয়ায় বৃদ্ধাকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় নতুন মোড়,

বৃদ্ধার নাতি ও নাতজামাই গ্রেপ্তার,

আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি

সুজয় বকসী,নড়াইল প্রতিনিধিঃ নড়াইলের কালিয়া উপজেলার  পিরোলী ইউনিয়নের জামরিলডাঙ্গা গ্রামের চাঞ্চল্যকর বৃদ্ধা সালেহা বেগমকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বৃদ্ধার নাতি রাশেদ (২২) ও নাতজামাই মিরাজকে (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার বিকেলে তাঁরা ১৬৪ ধারায় নড়াইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মোরশেদুল আলমের আদালতে হত্যাকা-ের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কালিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ আমানুল্লাহ আর বারী জানান, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে গ্রেপ্তার হওয়া রাশেদ ও মিরাজ উল্লেখ করেছেন, গ্রাম্য প্রতিপক্ষ মোল্লা গ্রুপের লোকজনকে ফাঁসাতে সালেহা বেগমকে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন বৃদ্ধার ছেলে ইরুপ খন্দকার। সে অনুযায়ী ২১ মে দিবাগত রাত ১টার দিকে বৃদ্ধার শরীরে পেট্রোল ঢেলে দেন ছেলে ইরুপ খন্দকার। রাশেদ ম্যাচলাইট দিয়ে আগুন দেন। আগুনে পুড়ে মৃত্যু হওয়ার পর রাত তিনটার দিকে তাঁরা চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন আসেন। মিরাজ তাঁদের সঙ্গে থেকে সহযোগিতা করেন।

এই হত্যাকা-ের মূল হোতা বৃদ্ধার ছেলে ইরুপ খন্দকারকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। 

এর আগে গত ৪ ও ৫ মে  এ ঘটনায় নিহত সালেহা বেগমের দুই পুত্রবধু কুলসুম ও নারগিস আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দেন। 

উল্লেখ্য যে, গত ২১ মে দিবাগত রাতে উপজেলার পেড়লী ইউনিয়নের জামরিলডাঙ্গা গ্রামের নূর আলী খন্দকারের স্ত্রী সালেহা বেগমকে (৭৪) ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর নিহতের মেয়ে মিনি বেগম বাদী হয়ে ১১জনের নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাতনামা ৬/৭জনকে আসামী করে কালিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১১, তাং-২৫/০৫/২১ইং।

এর ৯ মাস আগে  গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর বৃদ্ধা সালেহার ছেলে আরিফ খন্দকারকে রাতের বেলায় কুপিয়ে হত্যা করে দুবৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতের ভাই ইরুপ খন্দকার বাদী হয়ে গ্রামের প্রতিপক্ষের ১৫জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন। এই মামলার অধিকাংশ আসামীরা জামিনে বেরিয়ে আসে। 

এদিকে গত ৫জুন দুপুরে বৃদ্ধা সালেহা হত্যা মামলার বাদী ও আসামীপক্ষ নড়াইল প্রেসক্লাবে পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। সালেহা হত্যা মামলার বাদী নিহতের মেয়ে মিনি বেগম সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, আমার মাকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সাক্ষী আমার ভাবী নারগিস ও কুলসুমকে পুলিশ মারপিট করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নিয়েছেন।  জবানবন্দীতে আমার মা হত্যাকান্ডের সাথে আমার ভাই, ভাইয়ের ছেলে ও ভাইয়ের জামাইকে দোষী করে জবানবন্দী নেয়া হয়েছে। জবানবন্দী প্রত্যাহারের দাবি জানাই।’
অপর সংবাদ সম্মেলনে সালেহা হত্যা মামলার আসামী ওহাব মোল্যার মেয়ে মিনা খাতুন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ বৃদ্ধ সালেহা বেগম তিন বছরের অধিক সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় বিছানায় পড়ে ছিলেন। সম্প্রতি বৃদ্ধার ছেলে আরিফ খন্দকার হত্যা মামলার আসামী আমাদের বংশের ১৫জন আসামীর অনেকেই জামিনে বেরিয়ে আসেন। আসামীদের মারধর ও বাড়ীঘর ভাংচুরের ঘটনায় আমরা মামলা করি। পরে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের বংশের লোকজনকে শায়েস্তা করতে নিজের মাকে পুড়িয়ে আমাদের আসামী করা হয়েছে। যাদের আসামী করা হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ আসামী এলাকায় থাকেন না। মামলার অভিযুক্ত আসামী আকছির মোল্যা চাকুরীর সুবাদে খুলনায় বসবাস করেন। আসামী রেন্টু শেখ ও তার স্ত্রী  তাজমা বেগম খুলনায় বসবাস করেন। আসামী ওমর ও বাদল যশোরে বসবাস করেন। আসামী সাব্বির চাকুরীর কারনে ঢাকায় থাকেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন আসামী এলাকায় থাকেন না। আমরা আশা করি পুলিশ প্রশাসন সঠিকভাবে তদন্ত করে প্রকৃত খুনিদের সনাক্ত করবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।