বলাৎকারের ঘটনা বাবার কাছে বলে দিবে এই ভয়ে মাদ্রাসা ছাত্রকে খুন করলেন অধ্যক্ষ !

0
765
বলাৎকারের ঘটনা বাবার কাছে বলে দিবে এই ভয়ে মাদ্রাসা ছাত্রকে খুন করলেন অধ্যক্ষ !

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ফেনীর দাগনভূঞার সোনাগাজি মরহুম সামছুল হক হেফজ এতিমখানা মাদ্রাসার ছাত্র আরাফাত হোসেন ( ১০) কে বলাৎকারের পর হত্যা করেছে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন (৪২) নিজেই।গতকাল বৃহস্পতিবার ২৬ আগস্ট সন্ধ্যায় ফেনীর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করেন ওই শিক্ষক। গত শনিবার ২১ আগস্ট রাতে হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে। রোববার ২২ আগস্ট সকালে দাগনভূঁঞা থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করেন।

ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন তাঁর আদালতে অধ্যক্ষের জবাননন্দি লিপিবদ্ধ করেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেনের বাড়ী ইশ্বরগঞ্জ। অধ্যক্ষ আদলতে জানায়, ওই ছাত্র আরাফাত হোসেনকে (১০) হত্যার পর মাদ্রাসার অপর একজন ছাত্র ও তার একই এলাকায় বাড়ী এবং অধ্যক্ষের নিকতাত্মীয় জোহাইর আল ফায়িজকে (১১) নানা ধরনের হুমকিধামকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কিছু কল্প কাহিনী শিখিয়ে দেন। অধ্যক্ষের শেখানো কথামত নিহত আরাফাতের সহপাঠি জোহাইর আল ফায়িজ পুলিশকে জানায়, ‘ওই রাতে আরাফাতকে নিয়ে সে (জোহায়ের) কলে পানি আনতে যায়। কলে পানি না ওঠায় খেলা নিয়ে পুর্ব শত্রুতার জেরে ডোবা থেকে পানি আনার কথা বলে ডোবার কাছে নিয়ে যায়।আরাফাত ডোবা থেকে পানি নেওয়ার সময় তাকে ধাক্কা নিয়ে পানিতে ফেলে গলা চেপে ধরে হত্যা করে’।

দাগনভূঁঞা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমতিয়াজ আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, আদালতে অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন “মাদ্রাসার ছাত্র আরাফাতকে অধ্যক্ষ এর আগেও কয়েকবার বলাৎকার করেছে। গত শনিবার রাতে বলাৎকারের পর আরাফাত এ ঘটনাটি তার বাবাকে বলে দিবেন বলে অধ্যক্ষকে বলে দেন, অধ্যক্ষ তখনই আরাফাতকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন এবং তাকে গলা টিপে হত্যা করার পর তার লাশ মাদ্রাসার পাশে একটি ডোবায় ফেলে দেন। এরপর নানা ভয়িভীতি ও হুমকিধামকির মাধ্যমে নিরপরাধ একজন ছাত্রকে দিয়ে হত্যার ঘটনাটি ওই ছাত্র ঘটিয়েছে বলে শেখানো হয়।

তখনই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ,অন্য শিক্ষক ও সহপাঠি জোহায়েরের কথাবার্তায় অসংলগ্নতা দেখা যায়। পরে সোমবার নিহত ছাত্রের বাবা ফানা উল্যাহ বাদী হয়ে দাগনভূঁঞা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ওই দিনই আরাফাতের সহপাঠি জোহাইর আল ফায়িজ, অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন, দুই শিক্ষক নুর আলী আরাফাত, আজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেন। গত সোমবার তাদের ৪ জনকে গ্রেপ্তারের পর সহপাঠী জোহাইর আল ফায়িজকে ফেনীর শিশু আদালতে পাঠালে আদালত তাকে টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রেরণের আদেশ দিয়ে ফেনী কারাগারে প্রেরণ করেন। সোমবার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন ও দুইজন শিক্ষক নুর আলী আরাফাত ও আজিম উদ্দিনকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফেনীর বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠিযে ৫ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ।

আদালত মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে ৪ দিন ও অপর দুই শিক্ষককে ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত বুধবার ২৫ আগস্ট শিক্ষক নুর আলী, আরাফাত,আজিম উদ্দিনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। চার দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেনকে আদালতে পাঠানো হয়। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওসি আরো জানান, অধ্যক্ষকে থানায় নিয়ে চার দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার ২৬ আগস্ট আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর তাঁকে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।