বাবা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন,তদন্ত করবে প্রশাসন

    0
    240
    সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ  সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় চাচাকে বাবা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান উল্লেখ্য করে ভাতা উত্তোলনকারীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে  প্রাথমিক ভাবে অভিযোগের সত্যতা প্রমানিত হলে নড়েচরে বসেছে অভিযুক্তরা। সমাজসেবা অফিসে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সহযোগিতায় তদবীর করে বার বার সময় বৃদ্ধি করার পর গত ১৯ ডিসেম্বর উপজেলা নিবাহী কমকর্তার কায্যালয়ে সকলের উপস্থিতিতে একাধিক মুক্তিযোদ্ধাগন বলেছেন,নিহত মুক্তিযুদ্ধা নুর মিয়ায় কোন সন্তান ছিলনা। নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান।
    এ ছাড়াও অভিযুক্তরা  শুনানিতে কোন প্রমান দিতে না পারায় আরো অধিকতর তদন্তের জন্য এবার মুক্তিযুদ্ধার বাড়ি ও আশ পাশে মুক্তিযুদ্ধাদের কাছ থেকে সরজমিনে তথ্য সংগ্রহ ও তদন্ত করার নিদেশ দিয়েছে উপজেলা নিবাহী কমকর্তা বিজেন ব্যানাজি।
    আর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও  মুক্তিযুদ্ধা ভাতা বাতিল না করে কেন বার বার অভিযুক্তরা সময় বৃদ্ধি করার সুযোগ পাচ্ছে সে কারনে সকল মুক্তিযোদ্ধা ও অভিযোগকারী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
    জানা যায়,নিঃসন্তান মুক্তিযোদ্ধা নুর মিয়াকে তারেই আপন ভাতিজি বাবা উল্লেখ্য করে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা উত্তোলন করছে আবুল হোসেন। আর এই কাজটির মূলকারীগড় মুক্তিযোদ্ধার আপন ছোট ভাই আবুল হোসেন। তিনি নিজের দ্বিতীয় সন্তান (হালিমা বেগম)কে মুক্তিযোদ্ধা নুর মিয়ার সন্তান উল্লেখ্য করে ভুল তথ্য দিয়ে গত ৪বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা উত্তোলন করাসহ অন্যান্য সুবিধা নিজেই ভোগ করছেন। আর এই অভিযোগ তুলেছেন মৃত মুক্তিযোদ্ধার বড় ভাই মিয়া হোসেন।
    তিনি গত ০১,০৭,১৯ইং তারিখে তার ভাই নূর মিয়া নাম দিয়ে মিথ্যে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বাতিল করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবার জন্য আবুল হোসেনের বিরোদ্ধে তাহিরপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর পর থেকেই নানান ভাবে নিজেদের বাচাঁতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আবুল হোসেন ও সাফিয়া বেগম  গংরা। তারা এখন অভিযোগ কারী ও তার ছেলে মেয়ে এবং আত্নীয় স্বজনকে হাতে পায়ে ধরে ভুজিয়ে সুজিয়ে এই বিষয়টি  চাপা দেওয়ায় চেষ্টা করছে আবুল হোসেন তার স্ত্রী সাফিয়া বেগম ও তাদের সহযোগীরা । এদিকে কি ভাবে সবাইর চোখে ফাকিঁ দিয়ে ভুয়া তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বলে কাগজ তৈরী করা হল ভাতা উত্তোলণ করা হল আর কি ভাবেই সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কাগজ পত্রে স্বাক্ষর করলেন এনিয়ে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে।
    এবিষয়ে আবুল হোসেনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও কোন ভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
    অভিযোগকারী মিয়া হোসেন (মুক্তিযোদ্ধার বড় ভাই)বলেন,আমি অভিযোগ দিয়েছি যাতে করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়দানীকারী মুক্তিযোদ্ধার ভাতা না পায়। কারন আমার ভাই মারা গেছে বিয়ের একমাস পর নিঃসন্তান অবস্থায়। এরপর তার বউ আমার ছোট ভাইয়ের কাছেই বিয়ে বসে। তাহলে কি ভাবে আবুলের ২য় মেয়ে হালিমা আমার মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়ের সন্তান হয়। এই সন্তান আবুল হোসেনের সে ভূল তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা তুলে খাচ্ছে। এর বিচার হওয়া দরকার। অভিযোগের পর বার বার সময় বাড়িয়ে তারা তাদের ভুয়া কাগজপত্র গুলো ভাল ভাবে তৈরী করছে। মুক্তিযুদ্ধা ভাতা তুলার সময় অনেক মুক্তিযুদ্ধারা বাধা দেয় সাথে আমিও কিন্তু কোন কাজ হয় নি।
    তাহিরপুর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান,এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে  গত ১৯ডিসেম্বর হাজির হলে যাকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান উল্লেখ্য করা হয়েছে তা আমাদের প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমানিত হয়েছে।  অভিযুক্তরা কোন কাগজ দেখাতে পারে নি।
    উপজেলা নিবাহী কমকর্তা এখন সরেজমিন তদন্ত করার নিদর্শনা দিয়েছেন এক জন কর্মকতাকে।  এই বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে ডিএনএ টেষ্ট করা হবে।
    লিখিত অভিযোগ সূত্রে,স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী জানান,উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে মৃত ওলি মামুদের ছেলে নুর হোসেন ১৯৭১সালে মুক্তিযোদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি তাহিরপুর উপজেলার চিসকা গ্রামের মনসুর আলী মেয়ে সাফিয়া বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের দেড় মাস পর নিঃসন্তান অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা নূর মিয়া মারা যান। পরির্বতিতে সাফিয়া বেগম দেবর(মুক্তিযোদ্ধা নূর মিয়ার ছোট ভাই)আবুল হোসেনকে বিয়ে করেন। আবুল হোসেনের সংসারে ৭জন ছেলে মেয়ে রয়েছে। প্রথম সন্তান আকলিমা বেগমের জন্ম তারিখ ১৯৮৬ সালে। ২য় মেয়ে হালিমা আক্তারের জন্ম তারিখ ১৯৮৭সালে।  কিন্তু  আবুলের ২য় মেয়ে হালিমা কে নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত মুক্তিযোদ্ধা নূর মিয়ার সন্তান পরিচয় দিয়ে ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করে অন্যান্য সুবিধা ভোগ করে আসছে আবুল হোসেন।
    কিন্তু হালিমা আক্তারের জাতীয় পরিচয় পত্রে,স্কুলের খাতায়,হালিমার বিয়ের কাবিন নামায় ও পিতার নামের স্থলে লেখা আবুল হোসেন লেখা কিন্তু নাম পরিবর্তন করার চেষ্টা করে করেন কৌশলে চতুর আবুল। এখনও নিজেরদের বাচাঁতে সকল কাগজ পরিবতন করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।