বেনাপোল বন্দরের ক্রেন ও ফর্কলিফট অচলঃস্থবির বন্দর

    0
    209

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৪ডিসেম্বর,এম ওসমান,বেনাপোল: দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরের অধিকাংশ ক্রেন ও ফর্কলিফট অকেজো হওয়ায় হঠাৎ স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরের মালামাল লোড-আনলোড প্রক্রিয়া। আমদানিকারকরা সরকারের রাজস্ব পরিশোধ করেও আমদানিকৃত পণ্য বন্দর থেকে সময়মতো তাদের পণ্য খালাস করতে না পারায় বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ পণ্যজট।

    বন্দরের গুদাম থেকে পণ্য বের করার পর নতুন পণ্য ঢোকাতে হচ্ছে। জায়গার এ সংকটের কারণে পণ্যবোঝাই ট্রাক বন্দরের অভ্যন্তরে দাঁড়িয়ে থাকছে দিনের পর দিন। ট্রাক থেকে পণ্য নামানোর অনুমতি মিললেও ক্রেন মিলছে না। ফলে ক্রেন সংকটে বিপাকে পড়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। বন্দর ব্যবহারকারীদের মেশিনারিসহ ভারী মালামাল লোড-আনলোডের সময় দিনের পর দিন অপেক্ষা করে থাকতে হয় সিরিয়াল দিয়ে।

    ক্রেন নষ্ট হওয়াতে বেনাপোল বন্দরের ইকুইপমেন্ট ঠিকাদার কোম্পানি মেসার্স সীজ লজিস্টিক্যাল সিস্টেম (জেভি) এর অফিসে তালা মেরে সকল কর্মকর্তা পালিয়েছেন বলে জানা গেছে। অফিসের সবাই তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ করে রেখেছেন।

    বন্দরের একটি সূত্র জানায়, দেশের সিংহভাগ শিল্প-কলকারখানা, গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ ও বিভিন্ন প্রকল্পের বেশির ভাগ মেশিনারিজ আমদানি করা হচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। ক্রেন ও ফর্কলিফট ছাড়া এ জাতীয় পণ্য বন্দরে আনলোড ও বন্দর থেকে খালাস নেওয়া সম্ভব নয়। মংলা বন্দর থেকে ২০০২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পর অতি পুরাতন ক্রেন ও ফর্কলিফট মংলা বন্দর থেকে ভাড়া করে এনে এখানে কাজ চালানো হয়।

    ২০১০ সালের ২১ মার্চ বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঢাকার মহাখালীর মেসার্স এসআইএস লজিস্টিক্যাল সিস্টেমের (জেভি) পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তি হয়। ওই বছরের ১ আগস্ট থেকে তারা বেনাপোল স্থলবন্দরে বেসরকারী কার্গো হ্যান্ডলিং এর দায়িত্ব পায়। তারা বন্দরে ৬ টি ফর্কলিফট ও ৫টি ক্রেণ দিয়ে মালামাল ওঠানামার কাজ করার পর ওই বছরের ১০ নভেম্বর আরো ৬টি নতুন ফর্কলিফট নিয়ে আসে। কয়েকদিন কাজ করার পর এসব ফর্কলিফট ও ক্রেণ অকেজো হওয়া শুরু করে। কিন্তুু মেরামতের কোন লক্ষণ দেখা যায় না।

    চুক্তি অনুযায়ী পাঁচটি ক্রেন দিয়ে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ করার কথা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ৪টি ক্রেন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। একটি ক্রেন দিয়ে কাজ করা হলেও সেটি প্রায় সময় অকেজো হয়ে থাকে। বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার জানানোর পরও এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেননি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও বন্দরের ঠিকাদার কোম্পানির দায়িত্বহীনতার কারণে বেনাপোল স্থল বন্দরে সকল প্রকার ভারি পণ্য লোড-আনলোড করা যাচ্ছে না। এ কারণে বন্দরের শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন।

    বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম জানান, স্থলবন্দরের ক্রেন নষ্ট হওয়ার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বেনাপোল স্থলবন্দরে কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে আরও বেশি ক্রেন ও ফর্কলিফট সরবরাহের প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

    বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ক্রেন নষ্টের বিষয়টি বন্দর চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। বারবার তাগিদ দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাতে সাড়া দিচ্ছে না। বিষয়টি জানিয়ে একাধিকবার বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের (বাস্থবক) কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বন্দরে ঠিকাদার কোম্পানির ৫টি সচল ক্রেন দেয়ার কথা থাকলেও তারা ৪ টি ক্রেন দিয়ে কাজ করতে করতে বিকল হয়ে পড়ে।

    এর মধ্যে এখন একটি ক্রেন কাজ করছে কোন মতে জোড়াতালি দিয়ে। এ বন্দরে আগে ভারি পণ্য কম আসত, এখন ভারি পণ্য বেশি আসাতে ক্রেনের প্রয়োজনীয়তা বেশি হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান।

    বন্দর ব্যবহারকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, বন্দরের ড্রাইভার ও ইঞ্জিনিয়ারদের যোগসাজশে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব ফর্কলিফট ও ক্রেন ইচ্ছাকৃতভাবে অচল করে রাখেন দিনের পর দিন।

    মাঝেমধ্যে মেরামতের জন্য যেসব যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয় তার অধিকাংশই পুরনো। ফলে মাস না ঘুরতেই ফের তা অচল হয়ে পড়ে। বন্দরে যেসব ক্রেন ও ফর্কলিফট ব্যবহার করা হচ্ছে তার অধিকাংশই ভাড়া করা দীর্ঘদিনের ও পুরাতন।

    এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো রকম দায়সারা গোছের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। আর এ ক্রেন ও ফর্কলিফট ঠিকমত কাজ না করলেও ক্রেন ও ফর্কলিফট এর সিরিয়াল নিতে ১শ টাকা করে ঘুষ দিতে হয়। আর বিকল ক্রেন কোন রকম সচল হলে তার সিরিয়াল পেতে ৫শ টাকা হারে আদায় করা হয়।

    বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা জানান, বেনাপোল বন্দরের অবস্থা খুবই করুণ। ৩৬ হাজার টন ধারণক্ষমতার বন্দরে প্রতিদিন ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টন পণ্য লোড-আনলোড করা হয়। এসব পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য ন্যুনতম সাতটি ক্রেন প্রয়োজন। সেখানে মাত্র একটি ক্রেন দিয়ে কোন রকমে কাজ করা হচ্ছে। সেটা বিকল হলে বসে থাকতে হয় কখন আবার সচল হবে।

    ক্রেন নষ্ট হওয়াতে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে বেনাপোল বন্দর অচল হওয়ার উপক্রম। বেনাপোল স্থলবন্দরের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা না থাকায় বেনাপোল বন্দরের সমস্যা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করেছে।

    প্রতিদিন অন্তত ২০০টি ট্রাক পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। তিনি অবিলম্বে নষ্ট ক্রেন মেরামতের জন্য দাবি জানান।