সিলেট ও রাজশাহী নগরীতে আজ সিটি নির্বাচন:কে আসছে নগর কান্ডারী?

0
232

আমার সিলেট ডেস্ক রিপোর্ট: আজ বুধবার।রাত পোহালেই সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ৩৬০ আউলিয়ার প্রধান হযরত শাহজালাল মুজাররাদ ইয়ামনী ও হযরত শাহপরান রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম (রহ) ও শাহ মাখদুম রূপস রাহমাতুল্লাহে আলাইহির স্মৃতি বিজড়িত রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচন।

বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাই চিন্তিত। এছাড়া দুই সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় কেন্দ্রে ভোটার নেওয়াই প্রার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অনেকেই ধারণা করছে।

নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে কঠোর অবস্থানে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে পুরো নির্বাচনী এলাকা। সব কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। আগের তিন সিটির মতো আজও রাজধানীর নির্বাচন ভবন থেকে সার্বক্ষণিক ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে ইসি।
নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষে সব কেন্দ্রের ভোটের হিসাব যোগ করে রিটার্নিং কর্মকর্তারা মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ফল ঘোষণা করবেন। দুই সিটিতেই ভোটগ্রহণ হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ নির্বাচনে যাতে কোনো অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা বা বিতর্ক সৃষ্টি না হয় সেজন্য নির্বাচন কমিশন সতর্ক অবস্থানে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট করতে ইসির নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা জোরদার করেছে। ত্রিস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায়। ভোটগ্রহণকালে কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ইসি জানিয়েছে।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় এবং ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী দিয়েও ভোট বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় দুই সিটিতে মেয়র পদে জাতীয় পার্টি ছাড়া আর কোনো দলের উল্লেখযোগ্য কোনো প্রার্থী নেই। মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও তেমন পরিচিতি নেই। তাই মেয়র পদে ভোট দিতে ভোটারদের আগ্রহ কম বলে এলাকাবাসীরা মনে করছেন। তবে দুই সিটিতে বিএনপি-জামায়াতের অর্ধশতাধিক প্রার্থী রয়েছে। সব কাউন্সিলর প্রার্থীরাই ভোটারদের নিজ নিজ কেন্দ্রে নিতে নানামুখী কৌশল গ্রহণ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
এদিকে ক’দিনের বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেট সিটি করপোরেশনের কোনো কোনো এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। ক’টি ভোটকেন্দ্রেও বন্যার পানি উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে আজ ভোটগ্রহণকালে বৃষ্টি হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। আর তা হলে সিলেটে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় আজ বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। বৃষ্টি হলে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। এছাড়া রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় এখন আমের ভর মৌসুম। ওই এলাকার অনেক মানুষ এখন গাছ থেকে আম পাড়া, রক্ষণাবেক্ষণ, আম কেনা ও প্যাকেটজাত করা এবং বিক্রির জন্য দেশ-বিদেশে পাঠানোর কাজে ব্যস্ত। তাই এ কারণেও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের কেন্দ্রে নিতে তৎপর রয়েছেন বলে জানা যায়।
নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুসারে ভোটের আগের দিন মঙ্গলবার প্রার্থীদের প্রচারের কোনো সুযোগ না থাকলেও কৌশলে তারা বিভিন্নভাবে গণসংযোগ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। নিজেদের বাসায় আগত কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় এবং ফোনসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজেদের পক্ষে বিভিন্ন কৌশলে ভোট প্রার্থনা -স্বজন ও নিজ নিজ দলের নেতাকর্মীরাও বিভিন্নভাবে ভোট প্রার্থনা করেছেন।
এবার সিলেটে একজন প্রভাবশালী প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা মেয়র প্রার্থী হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য প্রবাসী সিলেটে এসে অবস্থান নিয়েছেন। তারা বিভিন্ন কৌশলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। এ ছাড়া ফোন ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রবাসীরা আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচনের স্বার্থে এবার ৩ ধাপে ৫ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ব্যবস্থা করে কমিশন। এক সঙ্গে তফসিল ঘোষণা করলেও ২৫ মে দেশের সবচেয়ে বড় গাজীপুর সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে সর্বমহলে প্রশংসা অর্জন করে ইসি। এর পর ১২ জুন বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে ইসি। এ নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়। খুলনায় খুবই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হলেও বরিশালের একটি ভোট কেন্দ্রে ইসলামী আন্দোলন ও আওয়ামী লীগের মধ্যে বিচ্ছিন্ন একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামী আন্দোলন ভোট শেষে ফলাফল বর্জন এবং সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। তবে প্রার্থী তালিকায় ইসলমীদল আওয়ামী লীগও দুই সিটিতে আজকের নির্বাচন নিয়ে সতর্ক অবস্থানে। এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। আওয়ামী চাচ্ছে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচনে দুই সিটিতেই মেয়র ও কাউন্সিলর পদে বিজয়। আর বিএনপি-জামায়াত এ নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা দুই সিটিতেই তাদের ভোট টানার চেষ্টা করেছে বলে জানা যায়। জাতীয় পার্টির এ চেষ্টা পুরোপুরি সফল হলে ভোটের হিসাব পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট করতে ইসির নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একদিন আগে থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করেছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে সমগ্র সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকা। কেন্দ্রে কেন্দ্রে স্থাপন করা হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। দুই সিটি নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে বিজিপি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারবাহিনী পুরো নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় থাকছে। বিজিবি ও র‌্যাব সার্বক্ষণিকভাবে টহল দেবে। পুলিশ ও আনসার বাহিনী কেন্দ্রে কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবে। আর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ বাহিনীও। প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন করে ফোর্স থাকবে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনে এবার মেয়র পদে লড়ছেন ৪ জন। এ ছাড়া ৩০টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১২ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৪৬ জন নির্বাচন করছেন। এই সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ১৫৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৪৮টিই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিএনপি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ না নিলেও রাজশাহীতে কাউন্সিলর পদে ১৬ জন স্থানীয় নেতা ভোট করছেন। এছাড়া জামায়াতেরও কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছে ৯ জন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী যে ৪ জন নির্বাচন করছেন তারা হলেন, আওয়ামী লীগের এ এইচ এম খায়রুজ্জামান, জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন, জাকের পার্টির এ কে এম আনোয়ার হোসেন ও ইসলামী আন্দোলনের মুরশিদ আলম। তবে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্তে আগেই ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন ৮ জন। এ ছাড়া ৪২টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন নির্বাচন করছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনে এবার ভোটার ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। মোট ভোটারের ২০ শতাংশই প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন। তাই এই তরুণ ভোটাররা জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হতে পারেন বলেট এলাকাবাসী মনে করছেন। সিলেট সিটিতে ভোট কেন্দ্র ১৯০টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৬৪টি।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ৮ জন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল, জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম এবং স্বতন্ত্র মো. আবদুল হানিফ, মো. শাহ জামান মিয়া, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান আগেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপি মেয়র পদে নির্বাচন না করলেও কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন এ দলের ৪৩ জন স্থানীয় নেতা।