হবিগঞ্জে ৬ দিনে আড়াই কোটি টাকার মাদক উদ্ধার, হত্যা-২ ও দূর্ঘটনায় ৪ জনসহ ৬ নিহতঃ ধর্ষণের শিকার মা-মেয়েসহ-৪ জন

0
201

নূরুজ্জামান ফারুকী,বিশেষ প্রতিনিধিঃ এ মাসের ১ম সাপ্তাহ থেকেই হবিগঞ্জ জেলা যেন এক ভয়ানক রূপ ধারণ করে। প্রথম সাপ্তাহে গত ৫ নভেম্বর ২০২২ ইং তারিখে মাধবপুরে প্রেম সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে আতিকুল ইসলাম মিশু (১৮) নামে এক কলেজ ছাত্রকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো ১ জন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহত আতিকুল ইসলাম মিশু উপজেলার এক্তিয়ারপুর গ্রামের শামসুল হকের পুত্র। সে মাধবপুর মৌলানা আছাদ আলী ডিগ্রী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র।
মাধবপুর থানার (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রেম সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে মধ্যরাতে তারেক মিয়া ও হরিতলা গ্রামের শফিক মিয়ার পুত্র শিমুল মিয়ার মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে শিমুল তার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে তারেকের উপর হামলা চালায়। তারেককে বাঁচাতে এগিয়ে আসে আতিকুল ইসলাম মিশু। এসময় তাকেও ছুরিকাঘাত করলে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ।
একই দিনে লাখাই উপজেলায় রাস্তা নিয়ে বিরোধের জেরধরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ইসাক মিয়া (৭০) নামে একজন নিহত হয়েছে। নিহত ইসাক মিয়া উপজেলার বামৈ পুর্ব গ্রামের মৃত হাজী রহমান মিয়ার পুত্র।
বামৈ পুর্ব গ্রামের শের আলী মেম্বার ও শাহ আলম গোলাপের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত একটি রাস্তা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধের জেরধরে দুপুরে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় ইসাক মিয়া নামে এক ব্যক্তি সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাকালে গুরুত্বর আহত হন স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
সড়ক র্দুঘটনা
৬ নভেম্বর মাধবপুরের মনতলা রেল স্টেশনের অদূরে পৃথক স্থান ট্রেনে কাটা অজ্ঞাত বৃদ্ধা ও এক যুবকের ট্রেনে কাটা লাশ উদ্ধার করেছে রেলওয়ে পুলিশ।
একই দিনে চুনারুঘাটের সৌদি প্রবাসী সোহাগ তাললুদার নামে এক যুবক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
১০ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলার হরিপুরে অটোরিক্সা (টমটম) চাপায় তুলি আক্তার (৬) নামে শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ৬ জন আহত হয়। নিহত তুলি আক্তার উজিরপুর গ্রামের আব্দাল মিয়ার কন্যা ।
মাদক
৭ নভেম্বর চুনারুঘাটে র‌্যাব-৯ এর অভিযানে ৪৬ কেজি গাঁজাসহ মনির মিয়াকে মাদকসহ আটক করা হয়েছে। সে উপজেলার পুর্ব পাকুরিয়া গ্রামের মোঃ ইউনুস আলীর ছেলে।
১০ নভেম্বর হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উচাইল থেকে গাঁজার গাছসহ নিজাম মিয়া (২৮) নামের এক মাদক বিক্রেতাকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় তার বাড়িতে চাষ করা প্রায় ১৫ টি গাঁজা গাছ জব্দ করে। আটককৃত নিজাম উচাইল গ্রামের আজদু মিয়ার পুত্র।
একই দিনে বাহুবলে ৪ কেজি গাঁজাসহ শাহীন আলী নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের মোকামপাড়া গ্রামের মৃত মোবাশ্বির আলীর ছেলে মোঃ শাহ শাহীন আলীকে বাহুবল উপজেলার মিরপুর এলাকা থেকে আটক করা হয়।
একই দিনে মধ্যরাতে হবিগঞ্জের জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভূমি) যৌথ অভিযানে ১ হাজার ৮৫০ পিস ইয়াবাসহ ২ মাদক সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে। ভোররাতে বাহুবল উপজেলার স্বর্ণরেখ গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মুখলেছুর রহমান (৪৮) ও মোঃ সোহাগ মিয়া (২২)। আটককৃতদের নামে প্রায় ডজন খানেক মাদক মামলা রয়েছে।
অপর আরেক অভিযানে বানিয়াচং থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৫২ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত মাদক বিক্রেতারা হল, সাগরদিঘির দক্ষিণপাড় মহল্লার হাসান আলীর পুত্র মোঃ আলী হোসেন (২৭), সাগরদিঘির পূর্ব পাড় মহল্লার মৃত আলা উদ্দিনের পুত্র মিজানুর রহমান (২৯)।
ধর্ষণঃ ৮ নভেম্বর বানিয়াচংয়ে কবিরাজি চিকিৎসার নাম করে এক স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জিম্মি করে ৪মাস যাবত ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে এক ভন্ড কবিরাজের বিরুদ্ধে। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করেছেন। অভিযুক্ত কবিরাজ বানিয়াচং উপজেলার ৩ নম্বর দক্ষিণ পূর্ব ইউনিয়নের জাতুকর্নপাড়া গ্রামের মৃত ধলাই মিয়ার পুত্র মোঃ এনামুল হক (৩৫)।
১০ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলার দৌলতপুরে গৃহবধুকে গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার অসুস্থ অবস্থায় তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে একই গ্রামের বাচ্চু মিয়া ও নবীগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের ওয়াদুদ মিয়াসহ ৩/৪ জন মিলে তার ঘরে প্রবেশ করে হাত-মুখ বেধে গণধর্ষণের শিকার হয়।
১১ নভেম্বর সদর উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের সুকড়িপাড়া গ্রামে জসিম নামে এক প্রতিবেশী মিষ্টির সাথে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে মা ও ১৪ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি জানা-জানি না করার জন্য জসিম ওই কিশোরীকে ২০০ টাকা দিয়ে বিষয়টি গোপন রেখে চিকিৎসা করাতে এবং মুখ খোললে তাদেরকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়।
হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ জনগণ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং শান্তি প্রিয়। জেলার সচেতন মহল মনে করেন আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ আমাদের সকলের সহয়োগীতায় আমাদের জেলাকে শান্তি ও আইন শৃংখলা বজায় রেখে শান্তি প্রিয় জেলা হিসেবে গড়ে তুলা সম্ভব।