হাসিনা-পুতিন টেলি-সংলাপে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুতিনের

0
139

আমার সিলেট ডেস্ক: পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পারমাণবিক জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর-২০২৩) ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

অনুষ্ঠানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুই দেশের স্বার্থ রয়েছে উল্লেখ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, এটি দুই দেশের জন্য সহযোগিতাকে আরও গভীর করেছে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির নিরাপত্তায় বড় অবদান রাখবে। আমি জোর দিয়ে বলবো যে, বাংলাদেশ আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু ও পুরোনো অংশীদার। যার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সমতা, পরস্পরের জন্য শ্রদ্ধা ও স্বার্থ মেনে নেওয়ার ভিত্তিতে নির্মিত। রাশিয়া-বাংলাদেশের সম্পর্কের ভিত্তি ৫০ বছর আগে স্থাপন করা হয়েছে। ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে। যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব বাংলার মানুষকে তাদের স্বাধীনতা, সংগ্রামে এবং তার পরে নতুন রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনে সমর্থন প্রদান করেছে। রাশিয়া সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। অপর দিকে শেখ হাসিনা বলেছেন, বন্ধু প্রতিম রাশান ফেডারেশনের সরকার এবং জনগণের প্রতি, যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অসামান্য সহযোগিতা করেছিলেন এবং আমাদের এই স্বপ্নের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ওই পাবমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে সহযোগিতা করায় রাশিয়া সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যেকার সম্পর্কের ভিত্তি সমতা ও সন্মানের।

বৃহস্পতিবারে পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পারমাণবিক জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে ক্রেমলিন থেকে ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ ধাপে উত্তরণ উপলক্ষ্যে আমি সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এ প্রকল্পে আমাদের দুই দেশের স্বার্থ জড়িত এবং এটি পারষ্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও গভীর করেছে। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে রোসাটম বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে কাজ শুরু করে। গবেষণার কাজ শেষ হওযার পর ২০১৭ সালে চুল্লির প্রথম ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়। দুই ইউনিট বিশিষ্ট ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের উৎপাদন ২৪ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন ২০২৬ সালে শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। পূর্র্ণমাত্রায় উৎপাদনে যাওয়ার পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণে সক্ষম হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কার্বন নির্গমন করবে না, যা একটি ভালো দিক।

শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গর্বের দিন এবং আনন্দের দিন। আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় পারমাণবিক জ্বালানি গ্রহণের মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আজ সফল পরিণতি লাভ করছে। তিনি আরো বলেন, আজ থেকে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশের কাতারে সামিল হলো এবং বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী নিউক্লিয়ার ক্লাবের কার্যকর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলো।

অচিরেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যোগ হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২৩ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিট থেকে এবং ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম। আমরা সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। অচিরেই প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। তিনি বলেন, পরমাণু শক্তি আমরা শান্তি রক্ষায় ব্যবহার করব। আমরা বিশ্ব ব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্রের সাধারণ ও সম্পূর্ণ নির্মূল এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তির বাস্তবায়নের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন করেছি এবং একটি স্বাধীন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছি। এই কর্তৃপক্ষ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।

রাশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্ধুপ্রতিম রাশান ফেডারেশনের সরকার এবং জনগণের প্রতি, যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অসামান্য সহযোগিতা করেছিলেন এবং আমাদের এই স্বপ্নের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং আজকে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা।

২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে মস্কোতে বৈঠক, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান এবং বিশেষ আতিথেয়তার স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছি। এখন পর্যন্ত আপনার সর্বাত্মক সহযোগিতায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে আমি এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করি। ২০২১ ও ২০২২-এ এই কেন্দ্রের যথাক্রমে ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ এর রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপন করি। আজ এই কেন্দ্রে পারমাণবিক জ্বালানি সংযুক্ত হলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলকে রাশান ফেডারেশন যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যেহেতু বন্ধুপ্রতিম ভারতেও একই রকম একটি প্রকল্প হচ্ছে, সে জন্য আমাদের কিছু জনবলকে প্রশিক্ষণের জন্য আমরা ভারতে প্রেরণ করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য আমরা পৃথক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছি। যে কোন ধরনের দুর্যোগে আমাদের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে দিকটা খেয়াল রেখে এই প্ল্যান্টের ডিজাইন প্রণয়ন এবং নির্মাণ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। তাছাড়া, ব্যবহৃত জ্বালানি (স্পেন্ট ফুয়েল) ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা রাশান ফেডারেশনের সঙ্গে চুুক্তি সই করেছি। রাশান ফেডারেশন এসব স্পেন্ট ফুয়েল তাদের দেশে ফেরত নিয়ে যাবে।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে আমাদের প্রিয় স্বদেশ আজ পৃথিবীর বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা এসডিজি পুরষ্কার, ‘চ্যাম্পিয়ান অব দি আর্থ’ পুরস্কার, ‘সাউথ-সাউথ’ পুরস্কার অর্জন করেছি। তাছাড়া, জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক সংক্রান্ত স্বীকৃতিসহ অনেক আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে দেশ পরিচালনা করছি। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা, সর্বজনীন শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা কৃষি গবেষণায় অভুতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছি। গত ১৫ বছরে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ সুফল নিয়ে এখন আমাদের তরুণ প্রজন্ম চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান আহরণ করছে। আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মনস্ক তরুণ প্রজন্মই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নপূরণ করবে।