৫ বছর পর বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল

    0
    403

    আমারসিলেট24ডটকম,নভেম্বরঃ টাইগারদের লাকি ক্রিকেট গ্রাউন্ড হিসেবে খ্যাত খুলনা তার মান রেখেছে এবারও। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ১৬২ রানে ম্যাচ জয়ের মধ্যদিয়ে ১ ম্যাচ বাকী থাকতেই ২-০ ব্যবধানে বহু প্রত্যাশিত টেস্ট সিরিজও নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের ৫+৫= ১০ উইকেট তাইজুল ৩+৩= ৬, জুবায়েরের ২ উইকেট দখল করা দুর্দান্ত বোলিং নৈপূন্যে সফরকারি জিম্বাবুয়ে মাত্র ১৫১ রানেই অল আউট হয়ে গেছে। ফলে সফরকারিদের ১৬২ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে বহু কাঙ্খিত সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে টাইগাররা। পক্ষান্তরে জিম্বাবুয়ে তাদের ২য় ইনিংসে বাংলাদেশের সামনে যেন দাঁড়াতেই পারেনি। মাসাকাদজার ৬১ ছাড়া চাকাভার ২৭ ও এরভিনের ২১ রান ছাড়া ২ ডিজিটের ১২ রান করেছেন চিগাম্বুরা।
    দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর পর বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল। তার আগে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ সর্বশেষ সিরিজ জিতেছিল। এছাড়াও এই খুলনা টেস্টটাই বাংলাদেশের জন্য অনেক কিছু পাওয়ার একটি ম্যাচ হয়ে রইলো। এতে দীর্ঘ দিন পর বাংলাদেশ সিরিজ তো জিতলই। একই সাথে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিলেন সাবেক বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ম্যাচে ১০ উইকেটের কীর্তি গড়লেন তিনি।
    এর আগে গত ৩ নভেম্বর সোমবার খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। তামিমের ১০৯ রান ও সাকিবের ১৩৭ রানের অনবদ্য জোড়া সেঞ্চুরি ও মাহমুদুল্লার ৫৬ রানের হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৩৩ রানে গিয়ে থামে টাইগারদের ১ম ইনিংস। এর জন্য তারা ১৫৯ ওভার খেলেছে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাসাকাদজার ১৫৮ রান ও চাকাভার ১০১ রানের জোড়া সেঞ্চুরিতে তারাও ৩৬৮ রানে গিয়ে থামে। ফলে ৬৫ রানে এগিয়ে থেকে ২য় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। আর সে ইনিংস গিয়ে থামে ৯ উইকেটে ২৪৮ রানে।
    ২য় ইনিংস শেষে টেস্টের ৫ম ও শেষ দিনে সফরকারি জিম্বাবুয়েকে ৩১৪ রানের টার্গেট দিয়েছে। তারও আগে ২৪৮ রান করে শুভাগত হোম চৌধুরীর বিদায়ের পর ২য় ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিক বাংলাদেশ। ফলে ২য় ইনিংস শেষে টাইগারদের লীড দাঁড়ায় ৩১৩ রানের। সিরিজে সমতা আনতে হলে ৩১৪ রান করতে হবে জিম্বাবুয়েকে। অতিথিদের ১০ উইকেট নেয়ার জন্য অন্তত ৬৮ ওভার রয়েছে বাংলাদেশের হতে। তবে মাত্র ৫১ ওভারেই অল আউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
    আজ শুক্রবার ৫ উইকেটে ২০১ রান নিয়ে খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের রক্ষণাত্মক কৌশলের জন্য দ্রুত রান তুলতে পারেনি স্বাগতিকরা। পেসাররা অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে বল করেন। স্পিনাররা লেগে ৬ জন ফিল্ডার রেখে লেগ স্ট্যাম্পে বল করেন। তার পরও শুভাগত হোমের ১ম টেস্ট অর্ধশতকের অপেক্ষায় ছিলেন মুশফিক। তার অভিষেক ফিফটি হওয়ার পরপরই তুলে মারতে গিয়ে এমশ্যাংগুইয়ের ৪র্থ শিকারে পরিণত হন শুভাগত। মাসাকাদজার অসাধারণ এক ক্যাচে বাউন্ডারি লাইনে আউট হন তিনি। এর পরই ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ।
    ২৪৮ রানে ৯ম ব্যাটসম্যান হিসেবে শুভাগত হোম চৌধুরীর বিদায়ের পর ২য় ইনিংস ঘোষণা করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। বিদায় নেয়ার আগে ক্যারিয়ারের ১ম হাফ সেঞ্চুরি অর্থাৎ বরাবর ৫০ রানে পৌঁছান শুভাগত। তার ১০৩ বলের ইনিংসটি সাজানো ৪টি চারে। আগের দিন অর্ধশতক পাওয়া মাহমুদুল্লাহ এদিন নিজের ইনিংস বেশি দূর এগিয়ে নিতে পারেননি। নাটসাই মুশাংওয়ের বলে লংঅফে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার পরিণত হয়ে শেষ হয় তার ৭১ রানের ইনিংসটি। শুক্রবার তার অবদান মাত্র ৮ রান। ৫ম দিন স্বাগতিকদের পতন হওয়া ৪টি উইকেটই নেন মুশাংওয়ে। মাহমুদুল্লাহর পর তাইজুল ইসলাম, শাহাদত হোসেন ও শুভাগতকে বিদায় করেন এ লেগস্পিনার।
    অন্যদিকে বাংলাদেশের ৪৩৩ রানের জবাবে ১ম ইনিংসে ৩৬৮ রান করে জিম্বাবুয়ে। ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল হক বলেছিলেন, জয়ের জন্যই খেলবে বাংলাদেশ। অপরদিকে জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার এল্টন চিগাম্বুরা বলেছিলেন, লক্ষ্য দেখে তাড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে তারা। কিন্তু অবশেষে শেষ হাসি হাসলো তাইজুলরাই।
    তারও আগে ঢাকা টেস্টে জিতে ১-০তে লিড নেয়া স্বাগতিকরা ৬৫ রানে এগিয়ে থেকে ২য় ইনিংস শুরু করে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে একে একে বিদায় নেন ২০ রানে তামিম, ২৩ রানে শামসুর, ৫৪ রানে মুমিনুল, ৬ রানে সাকিব এবং কোন রান করার আগেই মুশফিক। ফরে ২য় টেস্টের ৪র্থ দিন ব্যাটিংয়ে নামা সফরকারীরা আগের দিনের ৫ উইকেটে ৩৩১ রানের সাথে আর মাত্র ৩৭ রান যোগ করেই অলআউট হয়ে যায়। পক্ষান্তরে ১ম ইনিংসে সেঞ্চুরিসহ ১৩৭ রান আর ২ ইনিংস মিলে ১০ উইকেট নিয়ে অল রাউন্ড নৈপূন্য দেখিয়ে ম্যান অব দ্যা ম্যাচও হয়েছেন সাকিব।