পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান কারাগারে!

0
216

আমার সিলেট ডেস্ক রিপোর্ট: একটি দুর্নীতির মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে, যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার সময় তিনি যেসব উপহার পেয়েছিলেন, সেগুলো বিক্রি করে পাওয়া অর্থ সম্পর্কে ঘোষণা না দেয়ার কারণে ইসলামাবাদের একটি আদালত এ রায় দিয়েছে। তাকে অতিসত্বর গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোরও আদেশ দেয়া হয়।
এসএসপি সিআইএ মালিক লিয়াকতের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পিটিআই প্রধানকে হেফাজতে নেয়। ইমরান খানের সঙ্গে গাড়িতে বসে তার একটি ছবিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। জনাব খানকে মোটরওয়ে দিয়ে লাহোর থেকে ইসলামাবাদে স্থানান্তর করা হয়। তাকে আদিয়ালা কারাগারে রাখা হবে এবং উচ্চ নিরাপত্তা বলয়ে লক-আপে রাখা হবে। পিটিআই প্রধানকে একটি গাড়িবহরে ফেডারেল রাজধানী পৌঁছানোর পর পিআইএমএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়।
বার্তা সংস্থাকে ইমরান খানের আইনজীবী ইনতাযার হুসেইন জানিয়েছেন, এ রায়ের কিছু পরই ইমরান খানকে লাহোরের জামান পার্ক এলাকার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে পাঞ্জাব পুলিশ। খানের দল তাহরীকে ইনসাফের এক টুইট বার্তা উদ্ধৃত করে ডন পত্রিকা জানায়, তাকে কোট লাখপাত কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় খান আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। আদালত ইমরান খানকে এক লাখ রুপি বা প্রায় ৩৫৫ ডলার জরিমানারও আদেশ দিয়েছে। তোশাখানা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল যে, রাষ্ট্রীয় পদে থাকার সময় পাওয়া উপহার বিক্রি করে তিনি যে লাভ করেছেন, সেই বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতারা গতবছর এ অভিযোগ তুলেছিলেন। যদিও খান বরাবরই এসব অভিযোগ করে আসছেন।
গ্রেফতারের আগে রেকর্ড করা এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (টুইটার)-এ পোস্ট করা একটি ভিডিওতে খান তার সমর্থকদের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমার একটাই অনুরোধ, একটাই আবেদন আপনার কাছে। আপনার বাড়ির ভিতরে চুপচাপ বসে থাকা উচিত নয়। আমি যে সংগ্রাম করছি তা আমার নিজের জন্য নয়, এটা আমার জাতির জন্য, আপনাদের জন্য। আপনার সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য’ তিনি আরো বলেন, ‘যদি আপনি আপনার অধিকারের জন্য না দাঁড়ান, তাহলে আপনি ক্রীতদাসের জীবনযাপন করবেন এবং দাসদের জীবন থাকবে না’ -তিনি যোগ করেন। পোস্টে খান তাকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে ‘লন্ডন প্ল্যান’-এর উল্লেখ করেছেন।
একদিন আগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিবিসি হার্ডটক অনুষ্ঠানে বলেছেন, চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ‘প্রচন্ড ভীত’ হয়ে পড়েছে। খান বলেন, পাকিস্তান ‘অঘোষিত সামরিক আইনে’ চলছে এবং অভিযোগ করেন যে, ‘ফ্যাসিবাদীরা’ একে ‘অন্ধকার যুগের’ দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে খান নির্বাচিত হবার পর চার বছরেরও কম সময় ক্ষমতায় ছিলেন। সংসদীয় অনাস্থা ভোটে গত বছর তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।
তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই কেবল স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে। হার্ডটক উপস্থাপক স্টিফেন স্যাকার সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পর্ক শীতল হওয়ার পর থেকেই কি রাজনীতিতে ‘সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ’ নিয়ে তার সমালোচনা শুরু হয়েছে? অভিযোগ অস্বীকার করে খান বলেন, ‘তাহরীকে ইনসাফ (পিটিআই) পাকিস্তানের একমাত্র দল যেটি সামরিক একনায়কদের দ্বারা তৈরি হয়নি’। আর এ কারণেই দলটি ভেঙে দিতে তারা তৎপর হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গত মে মাসে আদালতের ভেতর থেকে তাকে গ্রেফতারের ঘটনা দেশব্যাপী বিক্ষোভের জন্ম দেয়। এতে কোথাও কোথাও সহিংসতাও ছড়িয়ে পড়ে। সহিংসতার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর জন্য তিনি বৈরী পরিবেশ তৈরি করেছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ও রাজনীতিবিদ বলেন, তিনি এবং তার দল কখনও সহিংসতাকে সমর্থন করেননি এবং সবসময় শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বলেন, সামরিক ভবনগুলোতে হামলার ঘটনার সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। একইসঙ্গে এসব মামলা আলাদাভাবে তদন্ত করা দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পাকিস্তান তাহরীকে ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির সদস্য এবং খানের আইনি দলের সদস্য বাবর আওয়ান বলেছেন, ‘এটি একটি ছলনা, আদালতের হাস্যকর রায়’। আওয়ান আল জাজিরাকে বলেন, ‘ইমরান খানকে ন্যায্য বিচার দেয়া হয়নি, যা দেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রতিটি নাগরিকের অধিকার’। খান শুনানির জন্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। পাকিস্তানের আইন অনুপস্থিতিতে বিচারের সুযোগ দেয় না, যার অধীনে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাই, আওয়ান বলেন, উচ্চ আদালতে তাদের আপিলের পরে ‘রায় স্থগিত করা এবং ইমরান খানের তাড়াতাড়ি মুক্তির সমস্ত সম্ভাবনা রয়েছে’।
গত বছরের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫০টিরও বেশি মামলা আনা হয়েছে। তিনি কোনো অন্যায়ের কথা অস্বীকার করে বলেছেন, অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে নভেম্বরের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হতে হবে এমন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যেতে পারে।
এদিকে ইমরান খানের ডাকে সাড়া দিয়ে পিটিআই চেয়ারম্যানের গ্রেফতারের প্রতিবাদ করায় গতকাল বিভিন্ন স্থান থেকে কমপক্ষে ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পাকিস্তান পুলিশ। পুলিশকে সর্বত্র কঠোর সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে এবং ইসলামাবাদ ও লাহোরে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
ওদিকে পাকিস্তান তাহরীক ইনসাফ (পিটিআই) পার্টি গতকাল লাহোর হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছে যাতে তার প্রধান ইমরান খানের গ্রেফতারকে পাঞ্জাব পুলিশ ‘বন্দুকের মুখে অপহরণ’ বলে অভিহিত করে।
পিটিশনের অতিরিক্ত সেক্রেটারি জেনারেল পিটিশনকারী উমাইর নিয়াজি আদালতকে অনুরোধ করেন যে, কোনো বিলম্ব ছাড়াই তার আবেদনটি গ্রহণ করুন এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাঞ্জাব পুলিশ ও সরকারকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে তার সামনে হাজির করার নির্দেশ দিন।
‘সরকার জনাব খানকে অবৈধ হেফাজতে রেখেছে। ইমরান খান আজ দুপুর ১২:৪৫টায় তার জামান পার্কের বাসায় একটি সভায় যোগদান করছিলেন যখন প্রায় ২০০ পুলিশ সদস্য বাড়িতে ঢুকে তাকে বন্দুকের মুখে অপহরণ করে। তারা তাকে অবৈধ হেফাজতে রাখছে, ‘আবেদনকারী বলেন, এবং আদালতের কাছে আবেদনটি শনিবারই গ্রহণ করে তাকে আদালতে হাজির করার জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়ার অনুরোধ জানান।
নিয়াজী অভিযোগ করেন, পুলিশ তোশাখানা মামলায় তার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আদালতের আদেশ না দেখিয়ে খানকে ‘অপহরণ’ করেছে। নিয়াজি আদালতে আবেদন করে বলেন, খানকে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যার ফলে তাকে এলএইচসিতে হাজির করার অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে, লাহোর হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন খানকে দোষী সাব্যস্ত করার নিন্দা করে বলেছে, ‘এটি ন্যায়বিচারের হত্যা এবং ন্যায্য বিচার সংক্রান্ত আইনের লঙ্ঘন’।
পাকিস্তান তাহরীকে ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান ইমরান খানের গ্রেফতারের প্রতিক্রিয়ায় পার্টির নেতা শাহ মাহমুদ কুরেশি গতকাল বলেছেন যে, কোর কমিটির একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে এবং সমর্থকদের আইন হাতে না নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তোশাখান্না মামলায় পিটিআই প্রধানকে তিন বছরের কারাদ- দেওয়ার পরপরই প্রকাশিত একটি ভিডিও বিবৃতিতে তিনি সতর্ক করেন, ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আমাদের অধিকার, কিন্তু কোনো রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করা যাবে না। আইন নিজের হাতে নেবেন না’। সূত্র : আল-জাজিরা, ডন অনলাইন, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও বিবিসি।