ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের দারুণ সমাপ্তির সোপান

0
134

আমার সিলেট ডেস্ক: ভারতের বিপক্ষে শুরুতে বিপর্যয় কাটিয়ে দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেন সাকিব ও হৃদয়, যাদের প্রচেষ্টার ফলে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের দারুণ সমাপ্তির সোপান রচিত হলো।

একটি দল ফাইনাল নিশ্চিত করেছে, আরেকটি দল একটানা ৩ হারে বিপর্যস্ত হয়ে ছিটকে গেছে। তাই ভারমুক্ত হয়ে রিজার্ভ বেঞ্চের পরীক্ষায় নামা দুই দলের দারুণ এক লড়াই হয়েছে শুক্রবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে। একটানা হারে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ খর্বশক্তির একাদশ নিয়েও উত্তেজনাকর লড়াইয়ের পর ৬ রানে হারিয়েছে শক্তিধর ভারতকে। আসন্ন বিশ^কাপের আগে ভারতের মতো শক্তিধর প্রতিপক্ষকে লড়াই করে হারিয়ে কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার ও অনুপ্রাণিত হওয়ার রসদ পেয়েছে বাংলাদেশ। চলতি এশিয়া কাপে সব ম্যাচে টস জিতলেও এদিন টস হেরে যান সাকিব আল হাসান। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সাকিব-তাওহিদ হৃদয়ের জোড়া অর্ধশতক এবং নাসুম আহমেদের ক্যারিয়ারসেরা ব্যাটিংয়ে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৬৫ রানের লড়াকু সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। এই ভেন্যুতে এটি ১৩তম ওয়ানডে খেলতে নেমে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এরপর বাংলাদেশী স্পিনারদের এবং বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও অভিষিক্ত ডানহাতি পেসার তানজিম হাসান সাকিবের দুর্দান্ত বোলিংয়ে স্মরণীয় এক জয় পায় বাংলাদেশ। শুভমান গিলের দুর্দান্ত শতক ছাড়া বাকিরা ব্যর্থ হয়েছেন, শেষদিকে অক্ষর প্যাটেল লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত ৪৯.৫ ওভারে ২৫৯ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। ১১ বছর পর এশিয়া কাপে আবার ভারতকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাকিব বলেছিলেন জিতেই দেশে ফিরতে চান, সেটি সত্য হওয়ায় স্বস্তি নেমেছে বাংলাদেশে।

হিসেব-নিকেশ ছাড়া একটি ম্যাচ, তাই ৫ পরিবর্তন এনে অর্থাৎ রিজার্ভ বেঞ্চের পরীক্ষায় নামে উভয় দল। এরপরেও ভারতের ব্যাটিং-বোলিংয়ের শক্তি কমেনি। তাই টস জিতেই বাংলাদেশের অনিয়মিত ও ব্যর্থ ব্যাটিং লাইনআপকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। আর তাতে সাফল্যও এসেছে। ১৪তম ওভারে বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারায় ৫৯ রানে। ওপেনিংয়ে ফেরা ফর্মহীন লিটন কুমার দাস ০, দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়া তানজিদ হাসান তামিম ১২ বলে ১৩, ১০ মাস পর খেলতে নামা এনামুল হক বিজয় ১১ বলে ৪ ও এদিন পাঁচে নামা মেহেদি হাসান মিরাজ দুইবার সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়ার পর ২৮ বলে ১৩ রানে সাজঘরে ফেরেন। মূলত শার্দুল ঠাকুরই ধাক্কা দেন। তবে পঞ্চম উইকেটে ১১৫ বলে ১০১ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান সাকিব আল হাসান ও তাওহিদ হৃদয়। ৫৫তম অর্ধশতক হাঁকিয়ে সাকিব সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান। কিন্তু ৩৪তম ওভারে তাকে সাজঘরে ফেরান সেই শার্দুল। সাকিব ৮৫ বলে ৬ চার, ৩ ছক্কায় ৮০ রান করেন। শামীম হোসেনকে (৫ বলে ১) এলবিডব্লিউ করে ক্যারিয়ারের ২০০তম উইকেট নেন রবীন্দ্র জাদেজা। সেই সঙ্গে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর অবশ্য নাসুম আহমেদ দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। সপ্তম উইকেটে তাওহিদের সঙ্গে ৪৩ বলে ৩২ রানের জুটি এবং শেখ মেহেদির সঙ্গে অষ্টম উইকেটে ৩৬ বলে ৪৫ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ভালো একটি সংগ্রহে নিয়ে যান নাসুম। তবে তাওহিদ পঞ্চম ফিফটি হাঁকিয়ে ৮১ বলে ৫ চার, ২ ছক্কায় ৫৪ রানে সাজঘরে ফেরেন।

যেকোনো পর্যায়ের ৫০ ওভারের স্বীকৃত ক্রিকেটে ক্যারিয়ারসেরা ৪৪ রান করেন নাসুম ৪৫ বলে ৬ চার, ১ ছক্কায়। মেহেদি ২৩ বলে ৩ চারে ২৯ রানে অপরাজিত থাকেন। ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৬৫ রানের দারুণ এক সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। শার্দুল ১০ ওভারে ৬৫ রানে ৩টি ও শামি ৮ ওভারে ৩২ রানে ২টি উইকেট নেন। এর আগে প্রেমাদাসায় ১২ ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশের সেরা সংগ্রহ ছিল ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮ উইকেটে ২৩৮। লড়াকু এই সংগ্রহ নিয়ে দারুণভাবে বাংলাদেশকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ শুরুতেই এনে দেন ১৪৫তম ওয়ানডে অভিষেক হওয়া ডানহাতি পেসার তানজিম হাসান সাকিব। তার সুইং ও দুর্দান্ত লাইন-লেংন্থে দিশেহারা হয়ে যায় ভারতের ব্যাটিং লাইন। ওয়ানডেতে ১০ হাজার রান করা রোহিত তার প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট হিসেবে শূন্য রানে ক্যাচ দিয়ে এবং অভিষেক হওয়া তিলক ভার্মা (৯ বলে ৫) বোল্ড হন। ১৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে সতর্ক ভারত এরপর শুভমান গিল ও লোকেশ রাহুলের ৮৭ বলে ৫৭ রানের জুটিতে ভালোভাবে এগোতে থাকে। কিন্তু ৩৯ বলে ২ চারে ১৯ রান করা সতর্ক লোকেশকে ফিরিয়ে দেন অফস্পিনার শেখ মেহেদি। কিছুক্ষণ পর ইশান কিষাণকে (৫) এলবিডব্লিউ করেন মিরাজ। ফলে চাপে পড়ে ভারত। সেখান থেকে গিল-সূর্যকুমার যাদব ৪৫ রানের জুটি গড়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি করেন। তবে যাদবকে (৩৪ বলে ৩ চারে ২৬) বোল্ড করে দেন সাকিব। জাদেজাও ১২ বলে ৭ রানে বোল্ড হন মুস্তাফিজুর রহমানের বলে। কিন্তু একপ্রান্তে গিল দুর্দান্ত খেলে গেছেন। তিনি ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। অবশ্য বাংলাদেশের বোলাররা দারুণ লাইন-লেংন্থে বোলিং করে গেছেন। তাই চাপ বেড়েছে ভারতীয় ব্যাটারদের ওপর। তাছাড়া ১৭০ রানেই ৬ উইকেট পতনে তখনো ৭৪ বলে ৯৬ রান প্রয়োজন পড়ে ভারতের।
গিল-অক্ষর প্যাটেল বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। কিন্তু ৪৪তম ওভারে শেখ মেহেদি শিকার করেন গিলকে। তিনি ১৩৩ বলে ৮ চার, ৫ ছক্কায় ১২১ রান করেন। বাংলাদেশী স্পিনাররা দুর্দান্ত লাইনে বোলিং করে গেছেন। তবে অক্ষরও লড়াই চালিয়ে যান। আর শেষদিকে মুস্তাফিজ দুর্দান্ত বোলিং করলে রানের চাপে পড়ে ভারত। তাই ৭ ওভারে ৬৪ রান দরকার পড়ে তাদের। কিন্তু ৪৫তম ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করতে থাকা নাসুম ১২ রান ও ৪৮তম ওভারে শেখ মেহেদি ১৪ রান দেন। অক্ষর প্যাটেল দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন, এতে করে আবার জয়ের আশা তৈরি হয় ভারতের। ২ ওভারে মাত্র ১৭ রান প্রয়োজন হয়। কিন্তু ২৯তম ওভারে ম্যাজিক দেখান স্লোয়ার-কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ। ওই ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন তিনি। অক্ষর ৩৪ বলে ৩ চার, ২ ছক্কায় ৪২ ও ১৩ বলে ১১ রান করে শার্দুল সাজঘরে ফেরেন। শেষ ওভারে তানজিমের বলে আর ১২ রান নিতে পারেনি ভারত। ১ বল বাকি থাকতেই শামি (৬) রান আউট হওয়াতে ৪৯.৫ ওভারে ভারত গুটিয়ে যায় ২৫৯ রানে। ফলে ৬ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে ১১ বছর পর আবার ভারতের বিপক্ষে জয় পেয়েছে টাইগাররা এবং প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ১৩ ওয়ানডে খেলে প্রথম জয় এটি। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে মিরপুরে জয় পায় বাংলাদেশ, কিন্তু এরপর টানা ১১ সাক্ষাতে ভারতের কাছে হেরে যায়। বিশ^কাপের আগে দলের জন্য দারুণ অনুপ্রেরণা এই জয়ে ভূমিকা রেখেছেন শুরুতেই ভারতের ব্যাটিং লাইনকে ধাক্কা দিয়েছেন তানজিম। ৭.৫ ওভারে মাত্র ৩২ রানে ২ উইকেট নেন তিনি। মুস্তাফিজ শুরুতে ভালো না করলেও শেষ পর্যন্ত ৮ ওভারে ৫০ রানে ৩ উইকেট নেন। সাকিব ১০ ওভারে ২ মেডেনে মাত্র ৪৩ রানে ১টি, শেখ মেহেদি ৯ ওভারে ১ মেডেনে ৫০ রানে ২টি ও নাসুম ১০ ওভারে মাত্র ৫০ রান দেন।

স্কোর: বাংলাদেশ ইনিংস- ২৬৫/৮; ৫০ ওভার (সাকিব ৮০, তাওহিদ ৫৪, নাসুম ৪৪, শেখ মেহেদি ২৯*; শার্দুল ৩/৬৫, শামি ২/৩২)।