শেভরন বাংলাদেশ’র আউটসোর্সিং নামে কমিশন বাণিজ্য বন্ধের আহ্বান জানিয়ে শ্রীমঙ্গলে মানববন্ধন

0
218

আমার সিলেট রিপোর্ট: শেভরন বাংলাদেশ লিমিটেড এর আউটসোর্সিং এর নামে কমিশন বাণিজ্য বন্ধের আহ্বান জানিয়ে শ্রীমঙ্গলে মানববন্ধন করেছে কোম্পানি থেকে সদ্য ছাঁটাইকৃত শ্রমিক-কর্মচারীরা। এর পূর্বেও কয়েকটি স্টেশনে কয়েক শতাধিক শ্রমিক ছাঁটাই করার সংবাদ পাওয়া গেছে।

রোববার (২৫ জূন ২০২৩) বিকালে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর বাজারের চৌমুহনায় শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনকালীন সমযে কালাপুর এলাকায় অবস্থিত মৌলভীবাজার গ্যাসফিল্ড থেকে সর্বশেষ চাকরিচ্যুতরা নির্মম এ ঘটনায় তাদের চাকরিতে পূর্ণবহাল ও প্রাপ্য অধিকার আদায়ের দাবিতে মানববন্ধন করেন।

জানা যায়,যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জ্বালানি খাতের বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনের বিরুদ্ধে বার বার বেআইনিভাবে এমনকি আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে অমানবিকভাবে কোন প্রকার পূর্ব ঘোষণা ব্যতীত বিনা অপরাধে চাকরিচ্যুতির অভিযোগসহ আন্তর্জাতিক মানের এই কোম্পানির বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। আর এই শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় দোষ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে অধিকার আদায়ের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হওয়া। অথচ আদালত হচ্ছে সবার ন্যায্য অধিকার অক্ষুন্ন রাখার একটি বিশ্বস্ত ও নিরপেক্ষ সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান।

মানববন্ধনকারীদের মধ্য থেকে অনেকের দাবি, ১৯৯৭ সাল থেকে থেকে সর্বনিম্ন এক যুগের বেশি সময় ধরে তারা শেভরন ও তাদের পূর্বসূরী কোম্পানি থেকে শেষ পর্যন্ত কাজ করে আসছিলেন। শ্রম আইন অনুযায়ী, দীর্ঘ সময় ধরে চাকরি করলে সেটি স্থায়ী করাই নিয়ম। কিন্তু এই আইন মানছে না শেভরন। উল্টো চাকরিচ্যুত করা হয়েছে কয়েক শতাধিক শ্রমিক ও কর্মচারীকে। এ কারণে সর্বশেষ ভরসা হিসেবে শ্রম আদালতে শেভরনের বিরুদ্ধে মামলা করেন কয়েকশ শ্রমিক এর মধ্যে রোববারের মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী ২২জন রয়েছে। শ্রম আদালতে করা তাদের ২২ জনের মামলা নং ১০২৯ থেকে ১০৫০/২০২২। মামলাগুলি পরিচালনা করছেন ব্যারিস্টার সাইদুর রহমান সুমন।
মামলার পাশাপাশি একই সাথে দেশের সর্বোচ্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।
অপরদিকে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক মানের এই কোম্পানির বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন এবং প্রয়োজন সাপেক্ষ আন্তর্জাতিক মানের মানবাধিকার সংস্থাকে স্বউদ্যোগে তাদের (নিয়োগ প্রক্রিয়া ও বিভিন্ন অভিযোগ) এই সকল কার্যকলাপের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তদন্ত পূর্বক সংশ্লিষ্ট আদালতকে সহযোগিতা করে চাকরিহারাদের আইনি সহযোগিতা প্রাপ্তিতে সাহায্যের প্রার্থনাও করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিশেষ করে ড্রাইভার,প্লাম্বার, হেলপার, কোকার, লেবার বিভিন্ন শ্রেণী পেশায় নিযুক্ত থেকে কাজ করা শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক মানের এই বহুজাতিক কোম্পানি কখনো লেবার হিসেবে তাদেরকে গ্রহণ করে না বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
মানববন্ধনকারীরা অভিযোগ করে বলেন, তারা তাদের দেশীয় লোকদেরকে লেবার হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশী এই সমস্ত লোকগুলোকে লেবার হিসেবে গ্রহণ করেনি বরং বিভিন্ন থার্ড পার্টির মাধ্যমে তাদেরকে একত্রিত করে একটি নাটক মঞ্চস্থ করেছে বলেও তাদের কেহ কেহ অভিযোগ অভিযোগ করছে।এ ছাড়াও চাকরির নিয়োগের সময়ে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠে আসছে। এর মধ্যে নিয়োগের কাগজপত্র নিজেদের হাতে না দিয়ে তৃতীয় পক্ষ কারো কাছে দেওয়া হয়েছে যা অধিকতর সরেজমিন অনুসন্ধানী তদন্ত সাপেক্ষ বেরিয়ে আসবে বলে অনেকেই দাবি করছেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী মোঃ জাকির হোসেন (ফিল্ড এইচ ই এস), কান্না জড়িত কন্ঠে অভিযোগ করে বলেন,২০ বছর বয়স থেকে শেভরনে জয়েন করে আজ আমার বয়স ৪০ এখন আমাদেরকে বিনা নোটিশে, বিনা কারণে, বিনা অপরাধে চাকরিচ্যুত করে। এই বয়সে আমি চাকরিচ্যুতির যে ব্যথা ও অসম্মান সেটাকে সামাল দিব নাকি আর কোন সংস্থা আমাকে চাকরি দিবে? না আমরা পরিবার চালাবো? আমরা কিভাবে চলবো? যৌবনের পূর্ণ সময় তাদেরকে দিয়ে আজ বিনা অপরাধে চাকরি হারিয়ে আমরা যাব কোথায়? এই জাতীয় অজানা উত্তরের আশায় শত প্রশ্ন তাদের অন্তরে নিয়ে তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জ্বালানি মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।

অপরদিকে আধুনিক সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে। কেহ কেহ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিচ্ছবি হিসেবে ই এই কোম্পানিকে মন্তব্য করছে।
মামলার বাদী গন, ইমরান, মোস্তফা, রফিক, ইমন, কসরু, মজনু, সঞ্জু ,কালাম, নাজির, রহিম, আলী হুসেন, মাসুদ, আতাউর, মুশাহীদ, আলমাস, সাজিদ, আফসার, আকরাম সকল কর্মচারীরা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, নিজেদের চাকরি হারিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছি বিচারের প্রত্যাশায় ।কিন্তু শেভরনে ভালো পজিশনে যারা রয়েছে,তারা আমাদেরকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করে না। অস্পৃশ্য হিসেবে মনে করে। তারা কাউকে পাত্তা দিতে চায় না এবং তারা নিজেদেরকে সব সময় বিশেষ মর্যাদাশালী মনে করে,যে কারণে কারো বিচার এমন কি দেশের সর্বোচ্চ আদালত কে পাত্তা দেয়নি। সে জন্য আমরা যখন আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য মামলা করলাম, তখনই তারা ঠিক করল আমাদেরকে চাকরিতে রাখা যাবে না।

এদিকে ঊর্ধ্বগতির বাজারেও বিগত আট বছরে তারা শ্রমিকদের বেতনও বাড়ায়নি দাবি করেন আরেকজন জগন্নাথ কানু।
অন্যদিকে বছরের পর বছর ধরে কোম্পানির লভ্যাংশ কর্মকর্তারা ভোগ করলেও শ্রমিকরা সেটির অংশ পায়নি। এমনকি কয়েক বছর আগে লভ্যাংশ না দেয়ার কারণে শেভরনের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশও জারি করেন হাইকোর্ট। এর আগে লভ্যাংশ না দেয়ায় পেট্রোবাংলা ও শ্রম মন্ত্রণালয় শেভরনকে চিঠি পাঠায় বলে দাবি করেন তিনি।

জানা যায়,বাংলাদেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়নে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ। জ্বালানি খাতের বহুজাতিক মার্কিন কোম্পানি শেভরন এককালে দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে কার্যক্রম চালালেও বর্তমানে এ অঞ্চলে শুধু বাংলাদেশেই কাজ করছে। বর্তমানে পেট্রোবাংলার সহযোগী হিসেবে বিবিয়ানা, মৌলভীবাজার ও জালালাবাদে গ্যাস উত্তোলন এবং সরবরাহে নিয়োজিত রয়েছে কোম্পানিটি।

এ ব্যাপারে শেভরন কর্তৃপক্ষের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে কেহ ফোন রিসিভ করেননি। তবে মৌলভীবাজার গ্যাস ফিল্ডের বাহিরে সেভরনের এক কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তিনি পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, বিষয়টি আদালতে সেজন্য সব কথা বলা যাবে না।তাছাড়া সুনির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া কথা বলার সুযোগ নেই।তবে ওরা থার্ড পার্টির নিয়োগকৃত, এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাঁ স্থানীয় হিসাবে তারা যথেষ্ট অশালিন আচরণ করে থাকে বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তাদের সাথে। এরকম অভিযোগ শুনেছি। এমন তত্ত্বের প্রেক্ষিতে মানববন্ধনকারীদের একজনকে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এধরনের অভিযোগের কথা অস্বীকার করে আমার সিলেটকে বলেন এরকম কোন প্রমাণ থাকলে আমরা যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নিব।
এদিকে মামলার এ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার সাইদুল হক সুমন এক ভিডিও বার্তায় আদালতের নির্দেশ অমান্য করে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ব্যাপারে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিচ্ছবি হিসেবে অন্যান্য কোম্পানির সাথে শেভরন বাংলাদেশ লিমিটেডকেও ইঙ্গিত করেছেন।